Uncategorized

নাসিক কাউন্সিলার বাদলের নাম ভাঙিয়ে সৌদি বাংলা শপিংমল দখলের পায়তাঁরা

 

মোঃ রিপন হাওলাদার

নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা চাঁদা ও দোকান না পেয়ে নারায়গঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল তার সন্ত্রাসী গুন্ডাবাহিনী দিয়ে একটি নির্মাণাধীন শপিংমল দখলের অপচেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন বেশকিছু দোকান গ্রহিতা ও ভূমি মালিকগণ।

সিদ্ধিরগঞ্জে নির্মাণাধীন শপিংমল মালিক সমিতির এক অভিযোগ সূত্রে জানা যায় বেশ কিছুদিন যাবৎ রাকিব ,হানিফ, শাহিন, বাপ্পি সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন জন ব্যক্তি তাদের নিকট বিভিন্ন সময়ে ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো ।

চাঁদাবাজ চক্রের দাবিকৃত টাকা মার্কেট সংশ্লিষ্টরা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা দোকান জোর করিয়া দখল করে নিবে বলে হুমকি প্রদান করে। হুমকি দাতাদের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড অনুযায়ী গত ২৮ আগস্ট ২৩ ইং তারিখ সন্ধ্যায় মোঃ রবিন, মোঃ বাপ্পি, মোঃ শাহিন ও মোঃ রাকিবসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩০/৪০ জনের সঙ্গবদ্ধ চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চিটাগাং রোড মুক্তি সরণী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাম পাশে নির্মাণাধীন সৌদি বাংলা শপিংমল দোকান মালিক সমিতির অফিসে গিয়ে পূর্বে দাবিকৃত ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা পূণরায় দাবি করে।

চাঁদা দাবির অর্থ দিতে অস্বীকার করলে দখলবাজ সিন্ডিকেট দোকান মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে শপিংমল থেকে বের করে দেয় এবং দোকান বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে তাদের অফিস কক্ষ দখল করে নিয়েছে বলে মোঃ লুৎফুর রহমান (৬৫) সহ ৪০ জন দোকান মালিক গত ২/৯/২৩ ইং তারিখ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যাহার এস এল নং ৪৯১০।

এমন ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ।নাম না বলার শর্তে অনেক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন ,কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল নিরবে চাঁদাবাজি করছে ।উক্ত শপিংমলে তাদের কোন জমি বা দোকান নেই গায়ের জোরে তারা সব কিছু করে বেড়ায় । অন্যান্য স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন , মোঃ আজিজুর রহমান মোল্লা সাহেব ছিলেন এলাকার সকলের প্রিয় ব্যক্তি । উনি আমাদের এই এলাকায় গ্যাস লাইন সংযোগ আনার ব্যবস্থা করেছেন, এলাকায় মসজিদ স্কুলসহ সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে সব সময় সহযোগিতা করেছেন।
উনার উদ্যোগে আমাদের চিটাগাং রোড মুক্তি স্মরণী বাম পাশে নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক শপিং মল তৈরি হচ্ছে ।মোঃ আজিজুর রহমান মোল্লা হলেন উক্ত শপিং মলের উদ্যোগতা ও অন্যতম ভূমিদাতা মার্কেটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হলে আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক ভাবে উপকৃত হতাম। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতো।

কিন্তু শাহজালাল বাদলের দখল গ্রাসের কারণে সৌদি বাংলা শপিং মলের নির্মাণ কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ।শপিংমলের জমির মালিক মোঃ আজিজুর রহমান মোল্লা সাহেব কে জিজ্ঞাসা করা হলে উনি বলেন, আমরা জমির মালিকগণ এলাকাবাসীর কথা চিন্তা করে ৬০ শতাংশ জমির উপর বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য স্বাধীন বাংলা গ্রুপকে দেই আমরা জমির মালিক মোট ১৩ জন এরা হোলাম মোঃ আজিজুর রহমান মোল্লা, মোঃ হুমায়ুন কবির, মোঃ আব্দুল্লাহ আজিজ ,মোঃ আব্দুল ওহাব, মোঃ আবুল হোসেন ,মোঃ মনির মোঃ জাহাঙ্গীর, মোঃ আব্দুস সোবাহান, শামসুন্নাহার, মোঃ হাবিবুর রহমান গং।

আমরা গত ২১ /৩/২০১১ ইং তারিখে সৌদি বাংলা প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম তাইজুল সাহেবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হই ।রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউ)’র অনুমোদনকৃত আর্কি টেকচারাল ডিজাইন অনুযায়ী ডাবল বেইজমেন্ট ও সেমি বেইজমেন্ট সহ একটি ১৬ তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য যৌথ উদ্যোগে রেজিষ্ট্রি চুক্তিতে আবদ্ধ হই। উক্ত বাণিজ্যিক ভবনটি আমাদের ২০১৭ ইং সালে বুঝাইয়া দেওয়ার কথা ছিল ।

কিন্তু আজ ২০২৩ ইং সাল শেষ হয়ে যাচ্ছে নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। আমরা জমির মালিকগণ বেঁচে থাকা অবস্থায় শপিং মলটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে এর আনুষ্ঠানিকতা দেখে যেতে পারবো কিনা বলতে পারছি না ।আমার বর্তমান বয়স ৭৩ বছরের ঊর্ধ্বে ডেভলপার কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর তাইজুল ইসলাম শুরু থেকে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। উনি ইন্টারন্যাশনাল চিটার বাটপার আমাদের জমির মালিকদের অনুমতি না নিয়ে জাল-জালিয়াতি করে আমাদের সম্পত্তি মতিঝিল সাউথইস্ট ব্যাংক ইসলামী শাখায় বন্ধক রাখেন।

উনাকে বারবার বলার পরও আমাদের জমিটি ব্যাংক থেকে বন্ধক মুক্ত করেনি।সে ব্যাংকের টাকা এবং গ্রাহকের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা সহ আরো অনেক মানুষের টাকা কানাডায় পাচার করেছে। বর্তমানে সরকারি মানিলন্ডারিং মামলায় তাইজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছে।সে জেলে থাকা অবস্থায় আমরা জমির মালিকগণ ও দোকান গ্রহীতারা মিলে তার অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে মার্কেটের চলমান কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য আমরা সার্বিক সহযোগিতা করেছি। নির্মাণ কাজে ব্যয় সংক্রান্ত সকল প্রকার হিসাব নিকাশ ডেভলপাররের লোকজন তদারকি করে। কিন্তু তাইজুল জেলে থাকায় শাহজালাল বাদল ঝামেলা তৈরি করে তার ভাড়া করা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের সৌদি বাংলা শপিং মলে বিভিন্ন সময় প্রবেশ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কে নির্যাতন করে। নানা ভাবে চাঁদা আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে এতে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় বাদলকে চাঁদা দিয়েছেন তার হিসাব ও প্রমাণ সাইফুল ও মার্কেটিং অফিসার রাকিবের কাছে বিদ্যমান রয়েছে বলে আমরা জমির মালিকগণ ও দোকান মালিক গণ জানতে পারি। অন্য জমির মালিক মোঃ হুমায়ুন কবির ও মনিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ভয়ে মার্কেটে যাই না আমাদের ভাতিজা মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান সবকিছু দেখাশুনা করছে ,আমরা তাকে দায়িত্ব দিয়েছি ।

কিন্তু গত ১০/৮ /২৩ ইং তারিখ মার্কেটের নির্মাণ কাজের তদারকি করতে গেলে ভাতিজা জিয়ার সাথেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অন্যতম সক্রিয় সদস্য
হানিফ ও অজ্ঞাতো আরো ১০ থেকে ১৫ জন দলবদ্ধ হয়ে তাকেও হেনস্থা করে এবং বলে মার্কেটে ঢুকতে হলে কাউন্সিলের বাদল ও নুরুদ্দিনের অনুমতি লাগবে। সে পরিস্থিতি খারাপ দেখে তৎক্ষণাৎ প্রাণভয়ে সেখান থেকে দ্রুত গাড়ি নিয়ে স্থান ত্যাগ করে।

উপরোক্ত জমিদাতারা আরো বলেন,
গত ২৮/ ৮/২৩ ইং তারিখ আমাদের সন্মানিত দোকান গ্রহীতাদের মধ্যে মোঃ লুৎফুর ,মোঃ কাশেম, মোঃ হেলাল, মোঃ সাগর ,রুবেল জহির, শাহজাহান সহ ২০ থেকে ২৫ জন গ্রহিতারা অফিসে বসে মার্কেটে নির্মাণ কাজের তদারকি মূলক আলোচনা করছিলো। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল তার সন্ত্রাসী গুন্ডাবাহিনী রবিন,রাকিব, হানিফ, শাহিন, বাপ্পি সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে দোকান গ্রহীতাদের কাছে ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে ও জমির মালিকগণের নিকট থেকে দোকান লিখে দেওয়ার জন্য মার্কেটিং ্কর্মকর্তা সাইফুলকে বলে এতে রাজি না হওয়ায় অফিসের সকলকে হেনস্থা করে।

দোকান গ্রহীতারা প্রাণ হারানোর শংকায় শপিং মল থেকে তৎক্ষণাৎ বের হয়ে যায় এবং জমির মালিকগণকে উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানান। সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবে আমরা জমির মালিকগণ ও দোকান গ্রহিতাগণ সবসময় মৃত্যুর আতংকে থাকি।এ বিষয়ে গত ২ /৯/ ২০২৩ ইং তারিখ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন দোকান মালিক সমিতি।

 

পরবর্তীতে আরো শুনতে পারি দোকান গ্রহিতা কাশেমকে প্রাননাশের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। দখল যজ্ঞে লিপ্ত চাঁদাবাজ বাহিনীর নানা রকম কর্মকাণ্ডে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।এই চাঁদাবাজ গোষ্ঠীর কবল থেকে রক্ষা পেতে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার,রেব ১১ এর অধিক নায়ক সহ অন্যান্য আই শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সৌদি বাংলা প্রপার্টিজ এর একজন নির্বাহী পরিচালকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন,স্থানীয় কাউন্সিলারকে বিভিন্ন সময়ে এক কোটি টাকা চাঁদা দেওয়া হয়েছে। তারপরও তিনি বিভিন্ন দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে মোটা অংকের টাকা ও দোকান লিখে দেওয়ার দাবি নিয়ে সমস্যা তৈরি করছে। আমরা অনেক সময় অতিষ্ঠতায় পড়ে তার চাহিদা পূরণ করেছি। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবে গুরুতর আকান্ত হয়ে ভীতসন্ত্রস্ত পরিস্থিতিতে পড়ে আমাদের এক সহকর্মী দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।

তারপরও সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমরা কাজ ধরেছে যা আগামী নভেম্বর ডিসেম্বরে কাজ শেষ করে দোকান বুঝিয়ে দিবো এর মধ্যেই গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার সময় স্থানীয় কাউন্সিলর কিছু লোকজনকে জড়িত করে চাঁদা দাবি করে বলে যে কাজ বন্ধ টাকা দিলে কাজ চলবে না হয় সকল কাজ বন্ধ।তার দাবি পঞ্চাশটি দোকান ও পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিতে হবে। সে এমনও বলে যেহেতু ডেভেলপারের চেয়ারম্যান কারাগারে রয়েছে প্রয়োজনে সে পুরো মার্কেট দখল করে নিবে কেউরে আসতে দিবেনা।এছাড়াও আমার অপর এক সহকর্মীকে এক অপরিচিত নাম্বার থেকে হুমকি দিয়েছে কেউ প্রজেক্টে প্রবেশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। বর্তমানে আমরা ডেভেলপার দোকান মালিক কাস্টমার ও ভূমি মালিকরা সেখানে তাদের বাহিনীর ভয়ে যেতে পারি না সবাই আতংকিত অবস্থায় রয়েছি।

উক্ত মার্কেটে কাউন্সিলারের কোন দোকান বা ভূমি সংক্রান্ত বিষয় রয়েছে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই মার্কেটে তার কোন দোকান বা জমির কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই তারপরও তার সন্ত্রাসী কর্মযঞ্জ থেমে নেই।তার কিছু পরিচিত জনের দোকান রয়েছে তাঁরাও তার কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে উপরোক্ত বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হতে ফোন করে সৌদি বাংলা শপিংমলের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন আপনি কি আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তাহলে আমার অফিস আসতে হবে এ কথা বলে ফোন কেটে দেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: অভিযোগ কারীদের সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ জিডির কপি এবং ভুক্তভোগীদের ধারণ করা ভিডিও বক্ততব্য ও কথপোকথনের রেকর্ড এর উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।সকল তথ্য উপাত্ত গুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে।



Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button