Uncategorized

যেভাবে ইলিশ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা!

যেভাবে ইলিশ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা!

যেভাবে ইলিশ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা!

এমটিনিউজ ডেস্ক : চাঁদপুর বড়স্টেশন জেলার সবচেয়ে বড় আড়ত। এই আড়তে ইলিশে সয়লাব। এমন বাজার দেখে যে কারও মনে হতে পারে, ইলিশের বাড়ি খ্যাত ইলিশ তার বাড়ি চাঁদপুরে অবস্থান করছে। তবে পদ্মা-মেঘনা থেকে আসছে না ইলিশ। আসছে সাগর থেকে ট্রলার কিংবা ট্রাকে করে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, চরফ্যাশন, বরগুনা, বরিশাল থেকে। ক্রেতাদের দাবি, ‘চাঁদপুরের ইলিশ’ কিনে ঠকছেন তারা।

চলতি ভরা মৌসুমে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার হাইমচর থেকে ষাটনল পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটারের রুপালি ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। এ এলাকার ইলিশ অতি সামান্য এবং দাম অত্যন্ত চড়া।

শুক্রবার সকালে ওই বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাগর এবং উপকূলীয় এলাকা থেকে আসা ইলিশ কিনতে হাজারো ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। এসব ক্রেতার তিন-চতুর্থাংশই ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের। ক্রেতাদের প্রধান চাহিদা চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ কেনা এবং কিছুটা সহনীয় দামে। কিন্তু তারা সাগর এবং সাগরবেষ্টিত ইলিশ চড়া দামে কিনে বাড়ি ফিরছেন। চাঁদপুরে এসে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন।

গতকাল সকালে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে ব্যবসায়ী আরমান হোসেন লঞ্চে এসেছেন চাঁদপুর মাছঘাটে। তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন রয়েছেন। সবাই চাঁদপুরের ইলিশ কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ভাই, শুনছি চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার সুস্বাদু ইলিশ পাওয়া যায়। দামও অনেক সস্তা। এখান থেকে কিছু ইলিশ কিনতে এসেছি। এসে দেখলাম, ইলিশের অভাব নেই; কিন্তু যেই ইলিশের (চাঁদপুরের) জন্য এলাম, তা তো পাইনি। কিছু ইলিশের দাম কেজি ১৬ থেকে ১৮শ টাকা। ওজন ১২শ গ্রামের ওপরে গেলে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা প্রতিকেজি। সাগর বা উপকূলীয় ইলিশের দাম চাঁদপুরের ইলিশের চেয়ে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম। বেশ প্রতারণাও চলে। ভোলা, চরফ্যাসন বা হাতিয়ার ইলিশকে বলছে চাঁদপুরের ইলিশ। এমন জানলে এতদূরে ইলিশ কিনতে আসতাম না। ঢাকার বাজারে ইলিশের দাম অনেক কম।’

ইলিশের চড়া দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট স্থানীয় ক্রেতারাও। তাদের অভিযোগ, মাছের সরবরাহ যথেষ্ট হলেও ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না। অনেকের ধারণা, এখানে সিন্ডিকেটের কারণেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।

রবিউল হাসান চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। দু’দিন আগে তারা ছয় বন্ধু মিলে সদরের হরিণার ফেরিঘাট এলাকায় যান ইলিশ খেতে। তিনি বলেন, ‘চড়া দাম, কিন্তু মনে হলো না চাঁদপুরের ইলিশ খেলাম। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ব্র্যান্ডিং নামটি দেওয়া হয়েছে অবশ্যই এখানকার ইলিশের ঐতিহ্য ও প্রাপ্তির দিক দেখেই। কিন্তু চাঁদপুরের ইলিশ নেই বললেই চলে। চাঁদপুরের মাছঘাটসহ বাজার দখল করে আছে অন্য জেলার ইলিশ। দামও নাগালের বাইরে। এটি আসলেই অনেক কষ্টের।’

শহরের মমিনপাড়ার গৃহিণী শামীমা তাসলিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের আয় সীমিত। আমরা এখন একটা ইলিশ (১ কেজি ওজনের কম) কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। অনেকে তাও কিনতে পারে না। অনেক ঘরেই ইলিশ রান্না হয় না।’

সাব্বির নামে স্থানীয় এক ক্রেতা বলেন, এখানে চার-পাঁচ দিনের বরফ দেওয়া ইলিশের দাম তুলনায় একটু কম। এসব দক্ষিণের মাছ। দাম বেশি।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, এখন সাগর এবং এর আশপাশের নদীর ইলিশই ভরসা। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১ হাজার মণ ইলিশ উঠছে মাছঘাটে। আমদানি কম হলে দাম বাড়ে। তবে তিনি দাবি করেন, সিন্ডিকেট করে এখানে মাছ বিক্রি হয় না। হয়তো কেউ মাছ ব্যবসায়ী দ্বারা প্রতারিত হতে পারেন।

চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন রুবেল বলেন, ‘ইলিশের দাম নিয়ে অনেক অভিযোগ আসছে আমাদের কাছে। মাছের ধরন ও পরিচয় নিয়েও প্রতারণার অভিযোগ আছে। আমরা এ ব্যাপারে বড় স্টেশন মাছঘাটসহ বিভিন্ন বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button